যে কারণে দাঁতের ক্ষতি হয়
অনেকেই হয়তো জানি না, প্রতিদিনের কী কী ভুলের কারণে মূল্যবান দাঁতগুলো অকালে হারিয়ে
ফেলছি। দাঁতের ক্ষতি প্রতিরোধের
সহজ নিয়মগুলো না মানার কারণে একটি দাঁতকে চিকিৎসা করে বাঁচাতে কয়েক হাজার টাকা খরচ
করি। দাঁতের যত্নে বিশেষ
কয়েকটি ভুল সংশোধন করে সময়মতো সঠিকভাবে যত্ন নেওয়ার গুরুত্ব তুলে ধরতে চাই।
**** দাঁত ব্রাশ দীর্ঘক্ষণ ধরে এবং জোরে জোরে
ব্রাশ করলে: আপনি যদি অনেকক্ষণ ধরে ব্রাশটি দাঁতের ওপর ঘষতে থাকেন, তবে এই দাঁতের ওপর শক্ত আবরণ এনামেল ক্ষয় হয়ে যাবে। কয়েক দিনের মধ্যে তখন
দাঁত অতিরিক্ত ঠান্ডা পানি বা গরম পানিতে শিরশির করবে, খেতে পারবেন না কোনো কিছু। এ কারণে মাড়ি থেকে দাঁত সরে আসবে। ফলে বাজারের নরম ধরনের ব্রাশ দিয়ে ঘুরিয়ে
ঘুরিয়ে ওপর থেকে নিচে দাঁতগুলো আস্তে আস্তে পরিষ্কার করতে হবে।
**** প্রতিদিন বেশি পরিমাণে অ্যাসিডিক খাবার
খাওয়া: সোডা, কমলার রস, খেলাধুলার সময় ব্যবহৃত পানীয়, ক্যান্ডি ও কমলা ইত্যাদি
খাবারে থাকে অ্যাসিড। একটি বরফের টুকরা যেমন পানিতে ছেড়ে দিলে কিছুক্ষণের মধ্যে গলে অদৃশ্য হয়ে যায়,
তেমনি আমাদের দাঁতের এনামেলও কিন্তু এ ধরনের অ্যাসিডিক খাবারের
কারণে ক্ষয়প্রাপ্ত হয়। এসব খাবার খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পানি বা পনিরজাতীয় খাবার খাওয়া না হয়। মুখের ভেতর লালার পিএইচ
লেভেল কমে গিয়ে দাঁতের ক্ষয় শুরু হবে। যদি কমলা বা আনারসের রস খাওয়ার সময় স্ট্রো ব্যবহার করা যায়,
তবে কিছুটা রক্ষা হয়। সবচেয়ে ভালো হয় এই জাতীয় ফলের রস খাওয়ার পর ভালোভাবে কুলকুচি
ও দাঁত ব্রাশ করা।
**** দাঁতকে অতিরিক্ত সাদা করার চেষ্টা: বয়স
বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দাঁতের রং পরিবর্তন হয়। ধবধবে আর সাদা থাকে না। কিন্তু এই দাঁতগুলোকে সাদা করার জন্য যদি
অতিরিক্ত ব্লিচিং করা হয়, তবে দাঁতের এনামেল
বা আবরণ অ্যাসিডের আক্রমণের শিকার হয়। এতে এনামেলের আবরণ ফেটে একটু ফাঁকা হয়ে যায়। এ জন্য দাঁত শিরশির
করে।
**** গরম খাবারের সঙ্গে ঠান্ডা পানীয়: যখনই অতিরিক্ত
গরম পিৎজা, শিঙাড়া বা অন্য কোনো গরম খাবারে কামড় দিই,
তখনই কিন্তু আমরা আমাদের দাঁতের শক্ত আবরণ এনামেলকে বাড়িয়ে ফেলি। সেই মুহূর্তে ঠান্ডা
পানীয়তে চুমুক দিই, তখনই এনামেলে চুলের চেয়েও সূক্ষ্ম ফাটল সৃষ্টি
হয়। হঠাৎ গরম, হঠাৎ ঠান্ডা খাওয়ার ফলে এনামেল কিছুটা প্রসারিত হয় বা বেড়ে যায়
এবং ফাটল ধরে। তাই গরম খাবার খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ঠান্ডা খাবার খাওয়ার অভ্যাস পরিত্যাগ করতে হবে।
**** ভুল টুথপেস্ট ব্যবহার: দাঁতের সুস্থতার
জন্য সব সময় অতিরিক্ত কর্কশ বা রুক্ষ টুথপেস্ট ব্যবহার করা উচিত নয়। অনেক ধরনের বিজ্ঞাপনেই
বলা হয়, টুথপেস্টের মধ্যে আছে এমন কিছু পদার্থ,
যা আপনার দাঁত রাতারাতি ঝকঝকে সাদা করে দিতে সক্ষম। এ ধরনের বিজ্ঞাপনে
আকৃষ্ট হয়ে যাঁরা এমন টুথপেস্ট ব্যবহার করবেন, তাঁদের দাঁত তাড়াতাড়ি নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই বিজ্ঞাপনে আকৃষ্ট না হয়ে টুথপেস্ট ব্যবহারে
সব সময় ফ্লোরাইড যুক্ত টুথপেস্ট ব্যবহার করা ভালো।
**** দাঁত দিয়ে বোতলের ছিপি খোলার অভ্যাস: অনেকেই
দাঁতের শক্তি দেখানোর জন্য দাঁত দিয়ে বোতলের ছিপি খোলার চেষ্টা করেন। এতে অনেক সময় দাঁত
ভেঙে যায়, ফেটে যায় ও ফাটল ধরে। পরবর্তী সময়ে এর চিকিৎসা
জটিলতা ছাড়াও ব্যয় বেড়ে যায়। কমে যায় দাঁতের আয়ু।
***** নিয়মিত দাঁত ব্রাশ ও ফ্লসিং না করা: প্রতিদিন
অন্তত দুই বেলা সকালে নাশতার পর ও রাতে ঘুমানোর আগে তিন থেকে চার মিনিট দাঁত ব্রাশ
করা প্রয়োজন। দাঁতের ফাঁক থেকে ময়লা, খাদ্যকণা বের করে আনার
জন্য ডেন্টাল ফ্লসে (একধরনের সিল্ক সুতা) ব্যবহার করা ভালো। যদি আপনার কর্মস্থলে দাঁত ব্রাশ না থাকে,
তবে বাসার মতো করে সেখানেও এক সেট টুথব্রাশ, পেস্ট ও ফ্লস রাখুন। কারণ অনেক সময়ে অফিসেই নাশতা বা মধ্যাহ্নভোজন বা রাতের খাবার
সারতে হয়। তখন সেখানেও যাতে দাঁত ব্রাশ করতে পারেন, সে ব্যবস্থা রাখাটাও জরুরি। তবে ব্রাশের আগে অবশ্যই ডেন্টাল ফ্লস ব্যবহার করবেন,
পরে নয়। নিয়মিত দাঁত ব্রাশ ও ফ্লস না করলে সহজেই দাঁতের গর্ত বা ক্যাভিটি
হয় এবং ব্যথা ও প্রদাহ থেকে আরও জটিলতা সৃষ্টি হয়। দাঁত ব্রাশ ও ফ্লস করা প্রয়োজন প্রতিদিন অন্তত
দুইবার।
***** বছরে অন্তত একবার দাঁত পরীক্ষা করা: বিজ্ঞানসম্মতভাবে
নিয়মিত বছরে অন্তত একজন অভিজ্ঞ ডেন্টাল সার্জনকে দিয়ে দাঁতের স্কেলিং করানো প্রয়োজন। দাঁতগুলো পরীক্ষা ও
মুখের বিভিন্ন অংশের পরীক্ষা করানো জরুরি। তাতে দাঁতের সামান্য গর্তকে ফিলিং করিয়ে যেমন রক্ষা করা যাবে,
তেমনি একটি প্রি-ক্যানসার ঘা বা প্রদাহকে ক্যানসারের আক্রমণ
থেকে রক্ষা করা যাবে।
No comments:
Post a Comment